Friday, July 13, 2018

রাজার বাড়ি

রাজা হরিশচন্দ্র!  ছোট বেলায় শোনা কিংবদন্তীর নাম। মা, দিদি, দাদুকে "রাজা হরিশচন্দ্র" পালা শুনে কাঁদতে দেখেছি। "রাজা হরিশচন্দ্র" পালার নাম শুনলেই এলাকার ধুম পড়ে যেত "ওটা দেখতেই হবে।" আজ ট্রেইনিং (যাতে অংশগ্রহণের সকল কৃতিত্ব আমার সেন্সির।) এর ছুটির দিনে ইন্টারনেটে বেড়ানোর জায়গা খুঁজতে গিয়ে কাছাকাছি এ রাজার বাড়ি পেয়ে আর লোভ সামলাতে পারলাম না,  চলেই এলাম। (ফিরিবার সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে  হালকা বনাঞ্চলে  একটি ছেলে প্রেমিকার বোঁচা নাক টানিয়া সোজা করিবার প্রয়াস পাইতেছে দেখিয়া নেশার কথা মনে পড়িয়া যাওয়ার শোকে আপ্লুত হইয়া আর বিশ্ববিদ্যালয়টা ঘুরিয়া দেখি নাই। এই শুক্রবারে তাহার সাথে দেখা করিবার কথা ছিল! )

রাজা হরিশচন্দ্রের রাজবাড়ি বা ঢিবি ঊনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। স্থানীয় লোকজন মাটিচাপা এই স্থানটিকে রাজবাড়ি ঢিবি হিসেবে চিহ্নিত করত। ১৯১৮ সালের দিকে রাজবাড়ি ঢিবির কাছাকাছি গ্রাম রাজাসনে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে এখানে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালানো হয়।  এর ফলে ঢিবির উত্তরাংশে ২৮মিটার * ২৮মিটার পরিমাপের একটি বৌদ্ধমমন্দির ও ২৭টি ভিক্ষু কক্ষ  বিশিষ্ট ৫৫.৬৪ মিটার * ৫৫.৬৪ মিটার বর্গাকৃতি একটি বৌদ্ধবিহারের নিদর্শন উন্মেচিত হয়েছে। এই খননকাজের ফলে আবিষ্কৃত হয় বৌদ্ধদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রত্নবস্তু ও গুপ্ত রাজবংশের অনুকৃত মুদ্রাস্মারক। এতে সেখানকার বৌদ্ধ মূর্তির পরিচয় পাওয়া যায়। খ্রিস্ট্রীয় সপ্তম শতকে এখানে বৌদ্ধ ধর্ম সভ্যতা সংশ্লিষ্ট একটি কেন্দ্র ছিল বলে বোঝা যায়। হরিশ্চন্দ্র রাজার প্রাসাদ-ঢিবির উৎখননে অনাবৃত হওয়া বিহারটির মধ্যে একাধিক পুনর্নির্মাণ এবং একাধিক মেঝের চিহ্ন লক্ষ করা যায়। বিহারের স্থাপত্যশৈলীতে চারটি স্তর অনুধাবনযোগ্য। চার স্তরের নির্মাণ কাঠামো পাওয়া যাওয়ায় বোঝা যায়, লম্বা সময় ধরেই এটি ব্যবহৃত হয়েছিল। খননকাজের সময় বিহারের ওপরের স্তর থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা এবং খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতকের ব্রোঞ্জ নির্মিত ধ্যানী বুদ্ধ ও তান্ত্রিক মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে প্রাপ্ত অনেক ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি দেখে বোঝা গেছে যে, মহাযানী বৌদ্ধ মতাদর্শের একটি কেন্দ্র ছিল এটি। এছাড়াও এখানে নানা ধরনের নিদর্শন পাওয়া গেছে। ধূতি পরিহিত, কিরিট মুকুট, চুড়ি, হার, কোমরবন্ধ ও বাজুবন্ধ সজ্জিত লোকেশ্বর-বিষ্ণু মূর্তি, পদ্মপানি, ধ্যানী বুদ্ধ, অবলোকিতেশ্বর ও প্রজ্ঞা পারমিতা প্রভৃতি ভাস্কর্য নিদর্শন এখান থেকে পাওয়া গেছে। শিল্পশৈলী বিবেচনায় এসব প্রত্নবস্তু খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের নিদর্শন বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।