Saturday, December 31, 2016

দ্বিজ চণ্ডীদাস- সই কেমনে ধরিব হিয়া ।

সই কেমনে ধরিব হিয়া ।
আমার বঁধুয়া, আন বাড়ি যায়,
আমার আঙিনা দিয়া ।।
সে বঁধু কালিয়া, না চায় ফিরিয়া,
এমতি করিল কে ।
আমার অন্তর, যেমন করিছে,
তেমতি হউক সে।।
যাহার লাগিয়া, সব তেয়াগিনু,
লোকে অপযশ কয়।
সেই গুণ নিধি, ছাড়িয়া পিরীতি,
আর জানি কার হয় ।
আপনা আপনি, মন বুঝাইতে,
পরতীত নাহি হয়।
পরের পরাণ, হরণ করিলে,
কাহার পরাণে সয় ।।
যুবতী হইয়া, শ্যাম ভাঙাইয়া,
এমতি করিল কে ।
আমার পরাণ, যে মতি করিছে,
সে মতি হউক সে ।।
কহে চণ্ডীদাস, করহ বিশ্বাস,
যে শুনি উত্তম মুখে।
কেবা কোথা ভাল, আছয়ে সুন্দরী,
দিয়া পর মনে দুখে।।

Friday, December 30, 2016

কেন বা কানুর সনে পিরীতি করিনু ।

কেন বা কানুর সনে পিরীতি  করিনু ।
না ঘুচে দারুন নেহা ঝুরিয়া মরিনু ।।
আর জ্বালা সইতে নারি কত উঠে তাপ ।
বচন নিঃসৃত নহে বুকে খেলে সাপ ।।
জন্ম হইতে কুল গেল ধর্ম গেল দূরে ।
নিশি দিশি প্রাণ মোর কানু গুন ঝুরে ।।
নিষেধিলে  নাহি মানে ধরম বিচার ।
বুঝিনু পীরিতের হয় স্বতন্ত্র আচার ।।
করমের দোষ এ জনমে কিবা করে ।
কহে বড়ু চণ্ডীদাস  বাশুলীর বরে ।।

এক কাল হইল মোর নয়লি যৌবন ।

এক কাল হইল মোর নয়লি যৌবন ।
আর কাল হইল মোরে বাস বৃন্দাবন ।।
আর কাল হইল মোর কদম্বের তল ।
আর কাল হইল মোর যমুনার জল ।।
আর কাল হইল মোর রতন ভূষণ ।
আর কাল হইল মোর গিরিগোবর্ধন ।।
এত কাল সবে আমি বঞ্চি  একাকিনী ।
এমন জনেক নাই শুনয়ে  কাহিনী ।।
দ্বিজ চণ্ডীদাস   কহে না কহ এমন ।
কর কোন দোষ নাই সব এক জন ।।  

এ দেশে না রব সই দূর দেশে যাবো ।

এ দেশে না রব সই দূর দেশে যাবো ।
এ পাপ পিরীতির কথা শুনিতে না পাব ।।
না দেখিব নয়নে পিরীতি করে যে ।
এমতি বিষম চিতা জ্বালি দিবে সে ।।
পিরীতি আখর তিন না দেখি নয়ানে ।
যে কহে তাহার আর না দেখি বয়ানে ।।
পিরীতি বিষম দায়ে ঠেকিয়াছি আমি ।
চণ্ডীদাস কহে রামি ইহার গুরু তুমি ।।  

এ দেশে বসতি নৈল যাব কোন দেশে ।

এ দেশে বসতি নৈল যাব কোন দেশে ।
যার লাগি প্রাণ কাঁদে তার পাব কিসে ।।
বল না  উপায় সই বল না উপায় ।
জনম অবধি দুখ  রহল হিয়ায় ।।
তিতা কৈল  দেহ মোর ননদী বচনে ।
কত না সহিব জ্বালা এ পাপ প্রানে ।।
বিষ খায়া  দেহ যাবে রব রবে দেশে ।
বাশুলী আদেশে কহে চণ্ডীদাসে ।।

এক জ্বালা গুরুজন আর জ্বালা কানু ।

এক জ্বালা গুরুজন আর জ্বালা কানু ।
জ্বালাতে জ্বলিল দে সারা হইল তনু ।।
কোথায় যাইব সই কি হবে উপায় ।
গরল সমান লাগে বচন হিয়ায় ।।
কাহারে কহিব কেবা যাবে  পরতীত ।
মরণ অধিক হইল কানুর পিরীত ।।
জারিলেক তনু মন কি করে ঔষধে ।
জগত ভরিল কালা কানু পরিবাদে ।।
লোকমাঝে ঠাই নাই অপযশ দেশে ।
বাশুলী  আদেশে কহে দ্বিজ চণ্ডীদাসে ।।

Thursday, December 29, 2016

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুনে মন ভোর ।

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুনে মন ভোর ।
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর ।।
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে ।
পরান পিরীতি লাগি থির নাহি বান্দে ।।
সই কি আর বলিব ।
যে পণ কর‍্যাছি মনে সেই সে করিব ।।
দেখিতে যে সুখ উঠে কি বলিব তা ।
দরশ পরশ লাগি আউলাইছে গা ।।
হাসিতে হসিয়া পড়ে কত মধুধার ।
লহু লহু হাসে বন্ধু পিরীতির সার ।।
গুরু গরবিত মাঝে রহি সখি সঙ্গে ।
পুলকে পূরয়ে তনু শ্যাম পরসঙ্গে ।।
পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার ।
নয়নের ধারা মোর বহে অনিবার ।।
ঘরের যতেক সভে করে কানাকানি ।
জ্ঞান কহে লাজঘরে ভজাইলাম আগুনি ।।

Tuesday, December 27, 2016

সুখ বলে, সারি রে তোর রাঁধার খবর বল

সুখ বলে, সারি রে তোর রাঁধার খবর বল
ছল করে সে কখন আনতে যাবে জল ।
সারি বলে, ওরে সুখ প্রশ্ন বলে তোর
যার লাগি রাই চুরি করে সেই সে বলে চোর ।
জানি ওরে তোর রাঁধা যে দিনকে করে রাত
চোরের উপর গোসা করে মাটিতে খায় ভাত ।
ওরে মাটিতে খায় ভাত
যজ্ঞেশ্বরী হল কুপকাত ।
নিলাজ নিঠুর কৃষ্ণ নাগর চালাক সুচতুর
আমার রাইকে করে কলঙ্কিনী রস সাগরে দেয় ডুব ।
খবরদার শ্যামকে আমার দিসনে রে দোষ খালি
মনে রাখিস এক হাতে বাজে না লো তালি ।
জেনে রাখো কেষ্ট যে তোর ভিমরুলেরই হুল
রাই কমলের মধু খেয়ে ভাঙল রাইয়ের কুল ।
এ কথাতো সবাই জানে হয়লো মধু ফুলে কেন
কেন হয়লো মধু ফুলে ?
ও রাই ঘোমটা দিয়ে নাচবে খ্যামটা
আবার জাঁতও যাবে ছুঁলে ।
সবাই জানে কেমন রে তোর শ্যামের ভালোবাসা
পিরীতি নয় পদ্মপাতা ও যে ব্যাঙের বাসা ।
বর্ষাকালে ব্যাঙ ডাকিলেই রাঁধার পোয়া বারো
চলতি পথে নূপুর খানি যায়না  কানে
কারো
সারি বলে প্রেমের কথা তুলিস রে তুই যদি
মনে রাখিস পুরুষেরই প্রেম যে মজা নদী ।
সুখ বলে মজা নদীর ঐ তো মজা হায়
ঝাপ দিয়ে যে তোর রাধিকার জীবন বেঁচে যায় ।

Sunday, December 25, 2016

''স্মৃতিতে তুমি''

...............
ফেসবুকে ঢুকতেই বার্তা এলো-
''ফটিক ফটিক দয়াকলা
ফটিক নাচে বেহান বেলা
ওলো ফটিক ভাই
তোর কপালে বিয়া নাই ''
আপনি কি ছোটবেলার মতো এখনো ছাড়াটা বলেন ?
কেন বলুন তো ? আপনি কে ?
হায়রে রাজীব ঢালী ! তুমি আমারে চিন না !
Really , I do not know you . Who are you ?
সেই চৈত্র মাসের কলাই খেতের কথা ভুলে গিয়েছেন !
আমার কিছুই মনে নেই । কে বলছেন ? সত্যি করে বলুন তো ।
এরপর আমি প্রায় ৪০টা ম্যাসেজ দিলাম কোন উত্তর নেই কিন্তু সিন হচ্ছে !
ফোনটা বেজে উঠলো । একটা বিদেশী নাম্বার । ধরলাম । ওপাশ থেকে ভেসে আসছে তার কান্না !
গলাটা আমারও ভিজে আসছে; কিছুই বোলতে পারলাম না !
ফোনটা কেটে গেল !
মনে পড়লো সেই ছয় সাত বয়সের বালিকাকে ! সেই কলাইয়ের খেতের মধ্যে , উঠানের দৌড়া দৌড়ী !
সত্যি আজ তোমাকে খুব মনে পাড়ছে ! I really miss you . জীবনে যেন আমাদের একবার দেখা হয় !

সে আমাকে খুঁজেছে কিন্তু আমি তাকে খুজিনি ! কত স্বার্থপর আমি !

Saturday, December 24, 2016

প্রাচ্য-পৌরাণিক নারী তারা


তারা হলেন নক্ষত্ররাজ্যের দেবী। তারা বৃহস্পতির স্ত্রী। বৃহস্পতি দেবতাদের পুরোহিত। তারা অতি সুন্দরী যুবতী। একদিন সোম বা চন্দ্র তারাকে দেখে তাঁর রূপে এত অধীর ও মুগ্ধ হয়ে গেলেন যে, তারাকে বৃহস্পতির কাছ থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে নিজের প্রাসাদে আটকে রাখেন। বৃহস্পতি বা ব্রহ্মার শত অনুরোধেও সোম তারাকে ফিরিয়ে দেন না। সমস্ত দেবকুল তখন সোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সোমের হয়ে লড়াই করে অসুরগণ, যার অধিপতি শুত্রু। বিশাল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। মারামারি, কাটাকাটি করে সর্বাংশে ধ্বংস হয়ে যাবার ভয়ে ব্রহ্মা আবার ফিরে আসেন সোমের কাছে; সোমকে তিনি বোঝান। সোম এবার রাজি হন এবং তারাকে মুক্ত করে দেন। তারা ফিরে আসেন বৃহস্পতির কাছে। কিন্তু অচিরেই টের পাওয়া যায়, তারা অন্তঃসত্ত্বা। বৃহস্পতি জানতে চান, এই সন্তানের পিতা কে - তিনি না সোম? কিন্তু তারা কিছুতেই তার জবাব দেন না। বৃহস্পতি তখন সন্তান জন্মের আগে তারাকে গ্রহণ করতে অসম্মতি জানান। বলেন, যতক্ষণ পুত্র জন্মলাভ না করছে তারাকে তিনি গ্রহণ করবেন না। এ-কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে তারার গর্ভের পুত্র জন্মগ্রহণ করে ফেলে। উজ্জ্বল সুন্দর দিব্যকান্তির পুত্রকে দেখে সোম ও বৃহস্পতি উভয়েই তাকে নিজের সন্তান বলে দাবি করেন। তাদের মধ্যে এত রেষারেষি, কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব দেখে শিশুটি রেগে গিয়ে উভয়েকেই অভিশাপ দিতে উদ্যত হলে ব্রহ্মা আবার আসেন তাদের উদ্ধারে। তিনি তারাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বিশেষভাবে জানতে চান আসলেই এই শিশুর পিতা কে - বৃহস্পতি না সোম। তখন তারা স্পষ্ট জানান, সোম। সোম সানন্দে পুত্রকে গ্রহণ করেন এবং তার নাম রাখেন বুধ।

পুরাণে তারার কাহিনি এভাবে বর্ণিত হলেও বীরাঙ্গনা কাব্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের চোখে সোম-তারার সম্পর্ক ভিন্নভাবে, নবরূপে ধরা দিয়েছে। মধুসূদন তাদের সম্পর্ককে অনেকটা কচ-দেবযানীর সম্পর্কের মতো করে এঁকেছেন। এখানে তারাকে তিনি দেবযানীর মতো গুরু-কন্যা না করে কল্পনা করেছেন গুরুপত্নী হিসেবে। গুরুপত্নী প্রায় মায়ের স্থলাভিষিক্ত। ফলে এই প্রেম বৈধ নয়। মধুসূদনের বীরাঙ্গনা কাব্যে দেবতাদের পুরোহিত বৃহস্পতি সোমের গুরু। শিক্ষাশেষে সোম যখন গুরুগৃহ ত্যাগ করতে উদ্যত, তখন তাঁর সান্নিধ্যের জন্যে উদ্গ্রীব, তাঁর প্রেমে অধীর গুরুপত্নী তারা সোমকে তাঁর গভীর প্রণয়ের কথা প্রকাশ করে একখানা পত্র লেখেন। সোমের আসন্ন বিরহে অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়েন তারা, যদিও তিনি সম্পূর্ণ অবগত যে, বৃহস্পতি সোমের গুরু। সেই হিসেবে গুরুপত্নীর সঙ্গে রোমান্টিক প্রেমের সম্পর্ক সম্পূর্ণ অনৈতিক। এর জন্যে তারার মনেও বহু দ্বিধা, সংকোচ ও অপরাধবোধ। কিন্তু সোমের প্রতি তাঁর বাঁধভাঙা ভালোবাসার কাছে ভেসে যায় সেই শাস্ত্রীয় নিয়মকানুন, সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সতীত্বরক্ষার অলিখিত নির্দেশ। আসন্ন বিদায়ী সোমকে লেখা তারার সেই চিঠিতে অনেক উদ্ধৃতি, অনেক অতীত দৃশ্যের অবতারণা, অনেক যৌথ অভিজ্ঞতার উল্লেখ রয়েছে। এসব থেকে পাঠককুল নিশ্চিন্ত হবেন যে, তারা এবং সোম দুজনেই দুজনকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন - অনেক দিন থেকেই। ফলে বীরাঙ্গনা কাব্যের ‘সোমের প্রতি তারা’ পত্র পাঠ করলে মনে হবে সোমের এই তারা-অপহরণ প্রকৃতপক্ষে কোনো অপহরণ ছিল না। অথবা এই সাজানো অপহরণ তারার সহযোগিতা বা ইন্ধনেই ঘটেছিল। কিন্তু পুরাণে তাদের অপহরণপূর্ব কোনো সম্পর্ক বা সোমের অন্তঃপুরে স্বেচ্ছায় তারার গমনের কোনো উল্লেখ নেই। এমনকি সোম যে বৃহস্পতির শিষ্য, সে-কথাও কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।
(http://archive.sahos24.com/2014/08/16/12105/print )

Friday, December 23, 2016

চণ্ডীদাস - দেখিলে কলঙ্কীর মুখ কলঙ্ক হইবে ।


দেখিলে কলঙ্কীর মুখ কলঙ্ক হইবে ।
এ জনার মুখ আর দেখিতে না হবে ।।
ফিরি ঘরে যাও নিজ ধর্ম লইয়া ।
দেশে দেশে ভ্রমিব যোগিনী হইয়া ।।
কাল মানিকের মালা গাঁথি নিব গলে ।
কানু গুন যশ কানে পরিব কুণ্ডলে ।।
কানু অনুরাগ রাঙ্গা বসন পরিব ।
কানুর কলঙ্ক ছাই অঙ্গেতে লেপিব ।।
চণ্ডীদাস কহে কেন হইলা উদাস ।
মরণের সাথী যেই সে কি ছাড়ে পাশ ।।

Thursday, December 22, 2016

বড়ু চণ্ডীদাসঃ এই ভয় উঠে মনে এই ভয় উঠে ।

এই ভয় উঠে মনে এই ভয় উঠে ।
না জানি কানুর প্রেম তিলে জানি ছুটে ।।
গড়ন ভাঙ্গিতে সই আছে কত খল ।
ভাঙ্গিয়া গড়িতে পারে সে বড় বিরল ।।
যথা তথা যাই আমি যত দুঃখ পাই ।
চাঁদমুখে হাসি হেরি তিলেক জুড়াই ।।
সে হেন বধূরে মোর যে জন ভাঙ্গায় ।
হাম নারী অবলায় বধ লাগে তায় ।।
চণ্ডীদাস কহে রাই ভাবিছ অনেক ।
তোমার পিরীতি বিনে সে জিয়ে তিলেক ।।

Monday, December 5, 2016

''বদনা বিষয়ক ভাবনা ''

.......................................
( ১ম পর্ব )
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠিয়া তাহার গলা না ধরিলে কেমন করিয়া চলে ! সেই মুহূর্তে তাহাকেই একমাত্র আপন বলিয়া মনে হয় । সে যে কি যাদু জানে, সেই জানে ! আজ সকালবেলা বৈকুণ্ঠে গিয়ে তাহার শ্রীরূপ প্রত্যক্ষ করিয়া নয়ন ভরিয়া গেল । আহা ! সামাদ স্যার ঠিকই বলিয়াছিলেন ,’’ মানব সভ্যতার সেরা আবিষ্কার বদনার নাল! ‘’ আহা ! বদনা , তার এবার নাল !’’
আমি বসিয়া বসিয়া সেই নাল আবিষ্কার করার শুভক্ষণের কথা কল্পনা করিতে লাগিলাম ।
মনে পড়িল সেই মনিষীর কথা । যিনি বলিয়া ছিলেন ,’’ কোন জাতিকে অপমান করিতে চাও , তাহলে তাহার বদনাগুল ধ্বংস করিয়া ফেল ।‘’
বদনার মাহাত্ম্য বলিয়া শেষ করা যাইবে না , তাই হয়তো বদনা লইয়া কবিরা মহাকাব্য লিখিবার সাহস দেখান নাই । তবে কেউ কেউ সেই দুঃসাহস দেখাইয়া রচনা করিয়াছেন চিরস্মরণীয় সেই কবিতা ,
‘’ শোন , মা জরিনা , বদনাটা কই ?
ত্বারা করে মোরে বল ।
প্রকৃতির ডাক আসিয়াছে মোর
এখনি লাগিবে জল । ‘’


শোনা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার বনে গিয়ে বদনার সঙ্কটে পড়িয়াছিলেন । তখন তিনি রচনা করিয়াছিলেন সেই আমর কবিতাঃ
‘’ সে দিন দুজনে হেগে ছিনু বনে ,
বদনা ছিল না সাথে ,
তাল পাতা দিয়ে পাছা মুছে তাই
চলে আসিছিনু ঘরে ।‘’
এ প্রসঙ্গে এক লৌকিক কবিকে বাথরুমে গাহিয়া উঠিতে শুনিয়াছিলামঃ
‘’বদনা আমার ছ্যাদা হইয়া গেছে
পানি থাকে না । ‘’
এই পানি না থাকার অভিজ্ঞতা যাহার হইয়াছে , সে ইহকালে নরক ভোগ করিয়াছে , সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই বলিয়া মনে হইতেছে । একবার এক মহৎ ব্যাক্তি বাথরুমে যাইবেন বলিয়া স্থির করিয়াছেন কিন্তু তাহার বন্ধু মদন তাহাকে জব্দ করিবার জন্য বদনাখানা লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন তখন তিনি গাহিয়ছিলেন, সেই আধ্যাত্মিক গান,
‘’ চাহি বদনা , বদনা দেয় না , মদনে
আমি বাথরুমে যাবো কেমনে ?
আমি বাথরুমে যাবো কেমনে ?’’
আমার দাদু তাহার এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিলেন । তাহারা যাইয়া দেখেন পাত্রী পক্ষ বিয়ের পাত্রী উলটাইয়া দিয়াছে । ছোট বোনকে দেখাইয়া , এখন বড় বোনকে বিয়ের পিড়িতে বসাইয়া দিয়াছে । পাত্র তাহা বুঝিতে পারিয়া , বিয়ের পিড়িতে বসিয়াই বলিল আমার বাথরুমে যাওয়া দরকার । তখন পাত্রী পক্ষ তাহাকে বাথরুমে লইয়া গেলে , তিনি বদনা লইয়াই দৌড়ে পালিয়েছিলেন ।
আমি ভাই , গ্রামের মানুষ , মাঝে মাঝে কোন শহুরে বাড়িতে কিংবা হোটেলে গেলে বাথরুমে দেখি বদনা নাই ! তখন যে আমার অবস্থা কি হয় , তাহা আমি জানি আর উপরওয়ালা জানেন ! ( আর তখন ব্যাকগ্রাউন্দে মিউজিক বাজেঃ
‘’এতো কষ্ট মেনে নেওয়া যায় না !
নিষ্ঠুর হোটেল ওয়ালা / বাড়ি ওয়ালা ।‘’ )
( চলবে ............)

Friday, December 2, 2016

বাঁশ

রাজীব ঢালী
-----
বাঁশ
ইহা আমার খুবই প্রিয় খাদ্য । বাঁশ ছাড়া আমার চলেই না । বাঁশের সুপ , বাঁশ ভাজি , বাঁশের তরকারি , বাঁশের পরটা , বাঁশের মামলেট , বাঁশের ভর্তা , বাঁশের খুচুরি কত খাইয়াছি , ভবিষ্যতে আরও খাইব । মাঝে মাঝে এমন ও বাঁশ খাইয়াছি, যাহা নিচের দিকের কোন এক দরজা দিয়া ঢুকিয়া উপরের দরজা দিয়া বাহির হইয়া গিয়াছে । তবুও তাহা হজম করিয়াছি । বাঁশ হজমে বিশেষ ক্ষমতা আমার আছে । না হইলে এতো বাঁশ হজম করি কি করিয়া ! বাঁশের নাম শুনিলেই এখন জিভে জল আসিয়া পড়ে , খাইতে ইচ্ছা করে । আমার হাতে ক্ষমতা থাকিলে বাঁশকে জাতীয় খাদ্য ও বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করিয়া তবেই ক্ষান্ত হইতাম ।
আশা করিতেছি এই নির্বাচনে জিতিয়া , দেশের প্রধান হইব এবং জাতীয় বাঁশ নীতি , জাতীয় বাঁশ গবেষণা Institute , জাতীয় বাঁশ রক্ষা কমিটি , সংসদীয় বাঁশ কমিটি গঠন করিব ।
ঘরের আঙ্গিনায় বাঁশ রোপণ বাধ্যতামূলক করিব এবং খাবার সময় বাঁশের একটা আইটেম বাধ্যতামূলক করিব । বাঁশই আমাদের ঐতিয্য । সুতরাং বাঁশ কে রক্ষা করিতে যাহা করা লাগে তাহাই করিব । বাঁশ সম্পর্কিত যত সাহিত্য আছে , তাহাকে জাতীয় সাহিত্য বলিয়া ঘোষণা করিব । এবং বাঁশ দ্বারা পিটানো ও অন্যান্য বাঁশ দ্বারা পরিচালিত খেলাকে জাতীয় খেলা বলিয়া ঘোষণা করিব । বাঁশ দ্বারা পিটানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করিব এবং ‘’বিশ্ব বাঁশ কাপ’’ আয়োজন করিব । যাহাতে বাঁশের মহিমা ও গৌরব সম্পর্কে বিশ্ববাসী জানিতে পারে ।
পাঠ্যপুস্তকে বাঁশ সম্পর্কে জ্ঞানীগুণীরা এখনো কিছু অন্তর্ভুক্ত করেন নাই । কিন্তু আমি করিব । পাঠ্যপুস্তক হইবে বাঁশময় । বাঁশের গুণগান থাকিবে সর্বত্র ।গ্রামে গ্রামে বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বাহিয়া ওঠা প্রতিযোগিতার আয়োজন হইবে !ভাবিতেই আমার ভালো লাগিছে ।
বাঁশ কাটিয়া যে খাতা তৈরি করা হয় । তাহা নিষিদ্ধ করিব । সুতরাং পরীক্ষা দেওয়ার ঝামেলা হইতে ছাত্ররা মুক্ত হইবে । আর হ্যাঁ , দেশে যৌতুক নিষিদ্ধ করিয়া , বাঁশ দেওয়া চালু করিয়া দিব ।
থাক হইয়াছে আজ আর আপনাদের বাঁশ দিবো না । সামনের ভাষণে দিবো । সাথে করিয়া সরিষার তৈল ফ্রি দিব , যাতে বাঁশ খাইতে যেন বেশি কষ্ট না হয় ।

Tuesday, November 29, 2016

''ওস্তাদ, মহিলা আছে ''

...........................
বাসে উঠিয়াই দেখিলাম তিন সারি সিট খালি পড়ে রয়েছে । কিন্তু কোন বীরপুরুষ সেখানে বাসার সাহস করিতেছে না । আমি চার পাশ দেখিয়া বুঝিতে চেষ্টা করিলাম , তারপর ধপ করে ইঞ্জিন কভারের উপরে বসিয়া পড়িলাম । আর বার বার ফাঁকা সিটগুলির দিকে তাকাইতে লাগিলাম । ওখানে এক চশমাওয়ালী অষ্টাদশীকে ছাড়া আর কাউকে দেখা যাইতেছে না । ওখানে বসিলে ক্ষতি কে ? কিন্তু চারপাশে যে সকল বীর বানরের মত ঝুলিতেছে কিন্তু বসিতে সাহস করিতেছে না , তাহাদের দেখিয়া মনে হইলো , এই সেই নিষিদ্ধ গন্দম ফল , যাহা খাইলে এখনি বাস থেকে নির্বাসিত করা হইবে । ইহার পরে কত জম্বুবান , হনুমান , রাবণরাজ বাসে উঠিলেন , কেহই ওখানে বসিতে সাহস করিলেন না ।
এতক্ষণে , মাথায় বুদ্ধি কাজ করিতে আরম্ভ করিল । মনে পড়িল সেই ‘’সিডো সনদ’’ সেই ‘’UDHR’’ এর কথা , সেই ১২০ মাইল বেগে প্রদত্ত সাহানা নাসরিন ম্যামের লেকচারের কথা । আহা ! দেশে আজ কেমন নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে ! সিট খালি রহিয়াছে , কিন্তু কোন পুরুষ সেখানে বসিতেছেনা অথচ পুরুষদের সিটে নারীরা দিব্যি বসিয়া রহিয়াছে ! সেই দেশের নাগরিক হইয়া আমার বুকটা গর্বে ভরিয়া উঠিল ।
বাসে উঠিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার ঘুম আসিয়া পড়ে । এবারো আসিয়া পড়িল , আমি ঘুমাইতে লাগিলাম । স্বপ্নে দেখিলাম , আমি ঐ ফাঁকা সিটে মিশরের রানী ক্লিওপেট্রার কাঁধে মাথা রাখিয়া ঘুমাইতেছি । আর ট্রয় এর হেলেন আমায় বাতাস করিতেছে ! এমন সময় রোমের সম্রাট সিজার আসিয়া তাহার তলোয়ারের ধাক্কায় আমায় ঘুম ভাঙ্গাইয়া দিল ! মেজাজটা এমন গরম হইল যে ব্যাটাকে একটা ‘’ও গোশি’’ মারিয়া বাসের বাহিরে ফেলিয়া দিলাম ।
বাসের সবাই চেঁচামেচি শুরু করিয়া দিল । ঘুম ভাঙ্গিয়া দেখিলাম হেল্পার কান্নাকাটি করিয়া বলিতেছে , মামা দিলেন তো মাজাটা ভাঙ্গিয়া ? আমি তো আপনারে শুধু শাহবাগ আসিয়া গিয়াছে বলিয়া ধাক্কা দিয়া ঘুম ভাঙাইতে চাহিয়াছিলাম মাত্র ।
আমি শুধু ‘’ধুর ব্যাটা চুপ থাক’’ বলিয়া ৫ টাকা ওর হাতে গুজিয়া দিয়া , ‘’ঔষধ কিনিয়া খাস,’’ বলিয়া বাস হইতে নামিয়া পড়িলাম  ।

Wednesday, November 23, 2016

সুন্দরী রাধে আওয়ে বনি

সুন্দরী রাধে আওয়ে বনি |
. ব্রজরমণীগণ মুকুটমণি ||
কুঞ্চিতকেশিনি, নিরুপমবেশিনি,.
রস—আবেসিনি ভঙ্গিনি রে
অধরসুরঙ্গিণি, অঙ্গতরঙ্গিণি,.
সঙ্গিনি নব নব রঙ্গিণি রে ||
কুঞ্জরগামিনি, মোতিমদশনি,.
দামিনি-চমক-নেহারিনি রে |
আভরণধারিণি, নব অভিসারিণি,.
শ্যামর হৃদয়বিহারিণি রে |
নব অনুরাগিণি, অখিলসোহাগিনি,.
পঞ্চম রাগিনী মোহিনি রে |
রাসবিলাসিনি, হাসবিকাশিনি,.
গোবিন্দদাস-চিত-শোহিনি রে ||
https://www.youtube.com/watch?v=CTfCIicNxF4

সজনি সজনি রাধিকা লো

সজনি সজনি রাধিকা লো
দেখ অবহুঁ চাহিয়া,
মৃদুলগম শ্যাম আওয়ে
মৃদুল গান গাহিয়া।
পিনহ ঝটিত কুসুমহার,
পিনহ নীল আঙিয়া।
সুন্দরী সিন্দূর দেকে
সীঁথি করহ রাঙিয়া।
সহচরি সব নাচ নাচ
মিলন-গীতি গাও রে,
চঞ্চল মঞ্জীর-রাব
কুঞ্জগগন ছাও রে।
সজনি অব উজার মঁদির
কনকদীপ জ্বালিয়া,
সুরভি করহ কুঞ্জভবন
গন্ধসলিল ঢালিয়া।
মল্লিকা চমেলী বেলি
কুসুম তুলহ বালিকা,
গাঁথ যূথি, গাঁথ জাতি,
গাঁথ বকুল-মালিকা।
তৃষিতনয়ন ভানুসিংহ
কুঞ্জপথম চাহিয়া
মৃদুল গমন শ্যাম আওয়ে,
মৃদুল গান গাহিয়া।
https://www.youtube.com/watch?v=lr14hTmu0Ao

Thursday, November 17, 2016

Saturday, November 12, 2016

বাংলা গানের ঘাড়ে ইংরেজ জ্বীনের আসর্ঃ

Noman Abdullah

"কানের নীচে" শব্দযুগল আমার কাছে খুবই পছন্দনীয়। জ্ঞাতার্থে বলি, ছবিটা 'কু'ক' এস্টুডিও'র '' সুন্দরী কমলা"র । 'অর্বাচীনেরা' বলবে., 'প্রাচীনের'ই সমস্যা। আরে ভাই, পরের 'নলখাগড়া' ধরে টানাটানি করলে যদি স্মার্ট হওয়া যায়, তাইলে আমি এই বান্দরের ছবি পাইলাম কই?
তোমরা আসলে চাও কী? দেশি-বিদেশী কম্বিনেশন্? 'শংকরে' তো 'সংখ্যা-আয়তন-পরিমাণ' বাড়ে; 'স্বাদ-গন্ধ-গুণাগুণ' বাড়ে না।
এভাবে বাংলা গানের '২৩' না মেরে বাঁদরামি করতে চাইলে 'যাত্রা'র মঞ্চে যাও। পাবলিক খাবে বেশ।
আমাদের জুনিয়র'রা অবশ্য এখনো 'জুনিয়র হরলিক্স' হিসেবে খেতে চায়..........!!
ভালো তো লাগবেই রে ভায়া!! বয়স তো কম! তবে ভুলে যাসনে.-
এটা আমার দেশে সিনেমার অশ্লীল দৃশ্যের পোশাক; বাংলা গানের নয়।
কী হে দিদি!! চটে গেলি নাকি। রেজারের বিজ্ঞাপনই মেয়েছেলে ছাড়া চলেনা! =কি যে বলো না>> এতো গানের বিজ্ঞাপন!!
*যথার্থই বিজ্ঞাপন (গানের নাকি .......?); সঙ্গীত নয়। আমার অর্বাচীনেরা তো ছুটছে এই পণ্যবাহী পণ্যের পিছেই////.....
রুচির নিকুচি করি সাড়ে সাতবার!!
কাজের কাজ তো পরে-
সোজা হয়ে হাঁটতে না পারার দুঃখে ক্যাটওয়াকের মডেল হয়ে গেলে..!? এই যদি তোমার 'নারীমুক্তি'; প্রত্যাশা তো বেড়ে যাবে দিদি! "নারী থেকে মুক্তি"।
গাইতে না পারলেও চিরকাল বন্ধুদের আড্ডায় বাউল-ফোকের সার্ভিস দিয়ে এসেছি বাংলা গানকে ভালবেসেই। সেই বাংলা গানের দুর্দশা দেখলে "প্রাচীন" মনে "অর্বাচীন" বয়সের ইচ্ছাটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে- - - - "কানের নীচে ঠাঁটায়ে একটা চড় দিতে পারতাম"!!!



 

Sunday, October 30, 2016

তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি !

আজ হায় রুবি রায়,ডেকে বলি তোমাকে ,
তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি ।।
মনে পড়ে রুবি রায়
কবিতায় তোমাকে,
একদিন কত করে ডেকেছি
আজ এই দুপুরে সাথে দুটি বাচ্চা নিয়ে
বাস থেকে তুমি যবে নামলে ।।
চিনতে পারবোনা তোমায়
সে কথা কি কোন দিন ভাবতে ।
দ্বীপ জ্বলা সন্ধ্যায়,হৃদয়ের জানালায়
কান্নার খাঁচা শুধু রেখেছি ।।
ও.. পাখি সে তো আসেনি,তুমি ভালবাসনি
স্বপ্নের জাল বৃথা বুনেছি।
আজ হায় রুবি রায়,ডেকে বলি তোমাকে ,
তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি ।।
মনে পড়ে রুবি রায়
কবিতায় তোমাকে, একদিন কত করে ডেকেছি

Saturday, October 29, 2016

পূর্বরাগ



প্রেমিক প্রেমিকা মিলনের পূর্বে দেখে কিংবা শুনে  যে অনুরাগ সঞ্চিত হয় তাকে পূর্বরাগ বলে  । যেমন মনে কর , শিল্পকলায় নাটক দেখতে গিয়ে এক অভিনেত্রীকে দেখেই প্রেমে পড়ে গেছ , সেটাই  পূর্বরাগ ।  এই পূর্বরাগ নানাভাবে হতে পারে  যেমন মনে কর,
 মার্কেটে গিয়ে এক মেয়েকে দেখেই তোমার পছন্দ হয়ে গেল , তো মেয়েটির পেছনে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করলে , তারপর  কোনভাবে  মোবাইল নাম্বার জোগাড় করতে পারলে তোমাকে আর পায় কে ?  এই যে সরাসরি দেখায় যে প্রেমের বন্যা বয়ে গেল , একে বলে  সাক্ষাৎ-দর্শন পূর্বরাগ ।

ফেসবুকে একমেয়ের মেকআপ মারা ফটোশপ করা ছবি দেখে তুমি তার প্রেমে পড়ে যেতেই পারো ।  এইযে তুমি তার ছবি দেখেই প্রেমে পড়ে গেলে একে বলে চিত্রপট দর্শন- পূর্বরাগ ।  

 পাশের বাড়ির মেয়েকে তুমি স্বপ্নে দেখতেই পারো , তাতে দোষের কিছু নাই  । স্বপ্নে দেখে দেখে যে প্রেমের উৎপত্তি হয় , তাকে কি বলে জানো ? স্বপ্ন দর্শন- অনুরাগ ।

আমার মনে কর , তুমি  তোমার কোন এক বন্ধূকে বল্লে  , দোস্ত এই মেয়েটার নাম্রার দে তো যার কথা তুই খুব বলিস । সে দিল । তুমি কথা বোলতে বোলতে  প্রেমে পড়ে গেলে  । একে বলে  বন্ধুমুখে শ্রবণ-পূর্বরাগ    

এখন যে ধরনের পুররাগের কথা বলবো , সেই ধরনের  পূর্বরাগে মেয়েরাই বেশি পড়ে । যেমন কোন লোভী মেয়ে যদি শুনে ওই ছেলেটা খুব ভালো ছাত্র , কিংবা এতো বড়লোক , এতো ভালো জব করে । তাইলে ওই লোভী মেয়ে নিজের প্রেমিককে ছেড়ে  ওই ছেলের প্রতি অনুরাগ অনুভব করতেই পারে  , একে বলে কি জানো ?  সুসময়ের কোকিল- পূর্বরাগ ।  আর ছেলেরা এ ধরনের কাজ করলে তাকে বলে দুধে-মাছি-পূর্বরাগ  

 আবার মনে কর কোন মেয়েকে পটানোর  জন্য ওই মেয়ের বান্ধবী কে তুমি ঠিক করলে । তো বান্ধবী  ওই মেয়ের কাছে তোমার সম্পর্কে  এতো গুণকীর্তন করলো যে ,মেয়ে তোমার প্রেমে পড়ে গেল । একে বলে সখীমুখে শ্রবন-পুররাগ ।

 তোমার পাশের বাসার মেয়েটা প্রতিদিন সকালে ‘সা রে গা মা পাদে ক্যাডা’  শুনিয়ে বাসার সবার ঘুমের বারাটা বাজায় কিন্তু তোমার কাছে তা মধুর মধুর লাগে । এই  মধুর মধুর ভালোলাগাকে বলে সঙ্গীত শ্রবণ – পূর্বরাগ  

Tuesday, October 11, 2016

‘মন পাগল , তুই বর্তমান নিয়ে থাক’


এই পাগলা মন , তুই বুজিস না কেন , কারো জীবনই দুঃখ কষ্ট মুক্ত নয় । তাহলে কি এটা প্রশ্ন হয় না যে , তুই কি ওর সাথে মানিয়ে নিবি নাকি পালিয়ে বেড়াবি ?

শোন , আমাদের জীবনের অধিকাংশ দুঃখই অপ্রয়োজনীয় । আমরা এগুলো নিজেরাই সৃষ্টি করি । তুই জিনিসগুল মেনে নিতে পারিস না, তাই তোকে দুঃখ দেয় । তোর এই মেনে না নেওয়াটা একধরণের বিচার বিবেচনা । তুই ওটাকে যতটা মেনে নিতে পারবিনা ঠিক ততটা কষ্টই তুই পাবি । ব্যাটা মন , তুই তো সবসময় অতীত নিয়েই পড়ে থাকিস । তুই ব্যাটা বর্তমান কে শুধুই অস্বীকার করতে চাস । আর বর্তমান থেকে পালিয়ে বেড়াস । তুই যত পালাবি তত দুঃখ পাবি ।
শোন পাগলা , তুই বর্তমানকে সম্মান কর , গ্রহণ কর দেখবি তোর দুঃখ বেদনা কষ্ট সব চলে যাবে । মন কেন তুই বর্তমানকে অস্বীকার করিস । করন তুই অতীত ছাড়া চলতে পারিস না আর শুধু ভবিষ্যৎ কথা ভাবিস । মনে কর , পৃথিবীতে কোন মানুষ নাই , যা আছে শুধু গাছপালা আর পশুপাখি । তাহলে কি আর সেখানে কোন অতীত আর ভবিষ্যৎ থাকবে ? কেউ কি আর সময় কত জিজ্ঞেস করবে ? তাহলে এখন সময় কত ? অথবা এখন কত তারিখ ? উত্তর হচ্ছে ‘’এখন’’ /’’NOW’’ /বর্তমান । সেখানে আর কোন সময় নাই ।
ব্যাটা মন, তুইত সব সময় বর্তমানকে অতীত আর ভবিষ্যৎের চিন্তা দ্বারা ঢেকে রাখিস । তোর এই উল্টা পাল্টা স্বভাবের জন্য , বর্তমানের কোন সম্ভাবনা ও শক্তি কাজ করতে পারে না । তোর কারনে আমার বর্তমানের অমূল্য কাজের ব্যঘাত ঘটে । তোর ঐ অতীত চিন্তার কারনে মনের ভেতরে কিছু আবাসিক দুঃখ বাস করে ।
তুই আর কোন সময় অতীত চিন্তা করবি না । ভবিস্বতের কথাও ভাববি না । তোর হাতে যে সময় টুকু আছে তা হল একমাত্র ‘’বর্তমান ‘’ । এখন তুই যা পারিস করে নে । যে সুযোগ আসে সেটা গ্রহণ কর । যা হাতের কাছে পাস সেটাই নে । সব সময় বর্তমান সময়কে হ্যাঁ বল । যা এখন আছে তাই গ্রহণ কর । সেটাই তোর জন্য ভালো হবে । যা এখন আছে তা অস্বীকার করে কোন লাভ নাই । বর্তমানকে অস্বীকার করে তুই চলতে পারবি না । হ্যাঁ বোধক উত্তর দিয়ে তুই জীবনের কাছে আত্মসমারপণ কর এবং দ্যাক হটাৎ করে জীবন তোর বিরুদ্ধে না গিয়ে কেমন সুন্দর পক্ষে কাজ করছে ।

Monday, September 12, 2016

আমার গানের মালা আমি করব কারে দান।

আমার গানের মালা
আমি করব কারে দান।
মালার ফুলে জড়িয়ে আছে
করুণ অভিমান।
মালা করব কারে দান।।

চোখে মলিন কাজল রেখা
কন্ঠে কাঁদে কুহু কেকা।
কপোলে যার অশ্রু রেখা
একা যাহার প্রাণ।।

শাঁখায় ছিল কাঁটার বেদন
মালায় শুচির জ্বালা।
কন্ঠে দিতে সাহস না পাই
অভিশাপের মালা।।

বিরহে যার প্রেমারতি
আঁধার লোকের অরুণধুতি।।
নাম না জানা সেই তপোতী
তার তরে এই গান।।

দারিদ্র্য

কাজী নজরুল ইসলাম

হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্‌।
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কন্টক-মুকুট শোভা।-দিয়াছ, তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!
দুঃসহ দাহনে তব হে দর্পী তাপস,
অম্লান স্বর্ণেরে মোর করিলে বিরস,
অকালে শুকালে মোর রূপ রস প্রাণ!
শীর্ণ করপুট ভরি’ সুন্দরের দান
যতবার নিতে যাই-হে বুভুক্ষু তুমি
অগ্রে আসি’ কর পান! শূন্য মরুভূমি
হেরি মম কল্পলোক। আমার নয়ন
আমারি সুন্দরে করে অগ্নি বরিষণ!
বেদনা-হলুদ-বৃন্ত কামনা আমার
শেফালির মত শুভ্র সুরভি-বিথার
বিকশি’ উঠিতে চাহে, তুমি হে নির্মম,
দলবৃন্ত ভাঙ শাখা কাঠুরিয়া সম!
আশ্বিনের প্রভাতের মত ছলছল
ক’রে ওঠে সারা হিয়া, শিশির সজল
টলটল ধরণীর মত করুণায়!
তুমি রবি, তব তাপে শুকাইয়া যায়
করুণা-নীহার-বিন্দু! ম্লান হ’য়ে উঠি
ধরণীর ছায়াঞ্চলে! স্বপ্ন যায় টুটি’
সুন্দরের, কল্যাণের। তরল গরল
কন্ঠে ঢালি’ তুমি বল, ‘অমৃতে কি ফল?
জ্বালা নাই, নেশা নাই. নাই উন্মাদনা,-
রে দুর্বল, অমরার অমৃত-সাধনা
এ দুঃখের পৃথিবীতে তোর ব্রত নহে,
তুই নাগ, জন্ম তোর বেদনার দহে।
কাঁটা-কুঞ্জে বসি’ তুই গাঁথিবি মালিকা,
দিয়া গেনু ভালে তোর বেদনার টিকা!….
গাহি গান, গাঁথি মালা, কন্ঠ করে জ্বালা,
দংশিল সর্বাঙ্গে মোর নাগ-নাগবালা!….
ভিক্ষা-ঝুলি নিয়া ফের’ দ্বারে দ্বারে ঋষি
ক্ষমাহীন হে দুর্বাসা! যাপিতেছে নিশি
সুখে রব-বধূ যথা-সেখানে কখন,
হে কঠোর-কন্ঠ, গিয়া ডাক-‘মূঢ়, শোন্‌,
ধরণী বিলাস-কুঞ্জ নহে নহে কারো,
অভাব বিরহ আছে, আছে দুঃখ আরো,
আছে কাঁটা শয্যাতলে বাহুতে প্রিয়ার,
তাই এবে কর্‌ ভোগ!-পড়ে হাহাকার
নিমেষে সে সুখ-স্বর্গে, নিবে যায় বাতি,
কাটিতে চাহে না যেন আর কাল-রাতি!
চল-পথে অনশন-ক্লিষ্ট ক্ষীণ তনু,
কী দেখি’ বাঁকিয়া ওঠে সহসা ভ্রূ-ধনু,
দু’নয়ন ভরি’ রুদ্র হানো অগ্নি-বাণ,
আসে রাজ্যে মহামারী দুর্ভিক্ষ তুফান,
প্রমোদ-কানন পুড়ে, উড়ে অট্টালিকা,-
তোমার আইনে শুধু মৃত্যু-দন্ড লিখা!
বিনয়ের ব্যভিচার নাহি তব পাশ,
তুমি চান নগ্নতার উলঙ্গ প্রকাশ।
সঙ্কোচ শরম বলি’ জান না ক’ কিছু,
উন্নত করিছ শির যার মাথা নীচু।
মৃত্যু-পথ-যাত্রীদল তোমার ইঙ্গিতে
গলায় পরিছে ফাঁসি হাসিতে হাসিতে!
নিত্য অভাবের কুন্ড জ্বালাইয়া বুকে
সাধিতেছ মৃত্যু-যজ্ঞ পৈশাচিক সুখে!
লক্ষ্মীর কিরীটি ধরি, ফেলিতেছ টানি’
ধূলিতলে। বীণা-তারে করাঘাত হানি’
সারদার, কী সুর বাজাতে চাহ গুণী?
যত সুর আর্তনাদ হ’য়ে ওঠে শুনি!
প্রভাতে উঠিয়া কালি শুনিনু, সানাই
বাজিছে করুণ সুরে! যেন আসে নাই
আজো কা’রা ঘরে ফিরে! কাঁদিয়া কাঁদিয়া
ডাকিছে তাদেরে যেন ঘরে ‘সানাইয়া’!
বধূদের প্রাণ আজ সানা’য়ের সুরে
ভেসে যায় যথা আজ প্রিয়তম দূরে
আসি আসি করিতেছে! সখী বলে, ‘বল্‌
মুছিলি কেন লা আঁখি, মুছিলি কাজল?….
শুনিতেছি আজো আমি প্রাতে উঠিয়াই
‘ আয় আয়’ কাঁদিতেছে তেমনি সানাই।
ম্লানমুখী শেফালিকা পড়িতেছে ঝরি’
বিধবার হাসি সম-স্নিগ্ধ গন্ধে ভরি’!
নেচে ফেরে প্রজাপতি চঞ্চল পাখায়
দুরন্ত নেশায় আজি, পুষ্প-প্রগল্‌ভায়
চুম্বনে বিবশ করি’! ভোমোরার পাখা
পরাগে হলুদ আজি, অঙ্গে মধু মাখা।
উছলি’ উঠিছে যেন দিকে দিকে প্রাণ!
আপনার অগোচরে গেয়ে উঠি গান
আগমনী আনন্দের! অকারণে আঁখি
পু’রে আসে অশ্রু-জলে! মিলনের রাখী
কে যেন বাঁধিয়া দেয় ধরণীর সাথে!
পুষ্পঞ্জলি ভরি’ দু’টি মাটি মাখা হাতে
ধরণী এগিয়ে আসে, দেয় উপহার।
ও যেন কনিষ্ঠা মেয়ে দুলালী আমার!-
সহসা চমকি’ উঠি! হায় মোর শিশু
জাগিয়া কাঁদিছ ঘরে, খাওনি ক’ কিছু
কালি হ’তে সারাদিন তাপস নিষ্ঠুর,
কাঁদ’ মোর ঘরে নিত্য তুমি ক্ষুধাতুর!
পারি নাই বাছা মোর, হে প্রিয় আমার,
দুই বিন্দু দুগ্ধ দিতে!-মোর অধিকার
আনন্দের নাহি নাহি! দারিদ্র্য অসহ
পুত্র হ’য়ে জায়া হয়ে কাঁদে অহরহ
আমার দুয়ার ধরি! কে বাজাবে বাঁশি?
কোথা পাব আনন্দিত সুন্দরের হাসি?
কোথা পাব পুষ্পাসব?-ধুতুরা-গেলাস
ভরিয়া করেছি পান নয়ন-নির্যাস!….
আজো শুনি আগমনী গাহিছে সানাই,
ও যেন কাঁদিছে শুধু-নাই কিছু নাই!

পসারিনী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      

পসারিনী, ওগো পসারিনী,
কেটেছে সকালবেলা হাটে হাটে লয়ে বিকিকিনি।
        ঘরে ফিরিবার খনে
        কী জানি কী হল মনে,
                বসিলি গাছের ছায়াতলে--
        লাভের জমানো কড়ি
        ডালায় রহিল পড়ি,
                ভাবনা কোথায় ধেয়ে চলে।

      এই মাঠ, এই রাঙা ধূলি,
অঘ্রানের-রৌদ্র-লাগা চিক্কণ কাঁঠালপাতাগুলি
        শীতবাতাসের শ্বাসে
        এই শিহরন ঘাসে--
                কী কথা কহিল তোর কানে।
বহুদূর নদীজলে
           আলোকের রেখা ঝলে,
                   ধ্যানে তোর কোন্‌ মন্ত্র আনে।

      সৃষ্টির প্রথম স্মৃতি হতে
সহসা আদিম স্পন্দ সঞ্চরিল তোর রক্তস্রোতে।
           তাই এ তরুতে তৃণে
           প্রাণ আপনারে চিনে
                   হেমন্তের মধ্যাহ্নের বেলা--
           মৃত্তিকার খেলাঘরে
           কত যুগযুগান্তরে
                   হিরণে হরিতে তোর খেলা।

      নিরালা মাঠের মাঝে বসি
সাম্প্রতের আবরণ মন হতে গেল দ্রুত খসি।
           আলোকে আকাশে মিলে
           যে-নটন এ নিখিলে
                   দেখ তাই আঁখির সম্মুখে,
           বিরাট কালের মাঝে
           যে ওঙ্কারধ্বনি বাজে
                   গুঞ্জরি উঠিল তোর বুকে।

      যত ছিল ত্বরিত আহ্বান
পরিচিত সংসারের দিগন্তে হয়েছে অবসান।
           বেলা কত হল, তার
           বার্তা নাহি চারিধার,
                   না কোথাও কর্মের আভাস।
           শব্দহীনতার স্বরে
           খররৌদ্র ঝাঁ ঝাঁ করে,
                   শূন্যতার উঠে দীর্ঘশ্বাস।

      পসারিনী, ওগো পসারিনী,
ক্ষণকাল-তরে আজি ভুলে গেলি যত বিকিকিনি।
           কোথা হাট, কোথা ঘাট,
           কোথা ঘর, কোথা বাট,
                   মুখর দিনের কলকথা--
           অনন্তের বাণী আনে
           সর্বাঙ্গে সকল প্রাণে
                   বৈরাগ্যের স্তব্ধ ব্যাকুলতা।

কাণ্ডারী হুশিয়ার

কাজী নজরুল ইসলাম
দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভূলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!!

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান!
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে, নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার!!

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!
“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!

গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ
কান্ডারী! তুমি ভূলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
‘করে হানাহানি, তবু চল টানি’, নিয়াছ যে মহাভার!

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙ্গালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।

ফাঁসির মঞ্চে যারা গেয়ে গেল জীবনের জয়গান,
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রান?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার!

কৃষ্ণনগর; ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩

কুলি মজুর

 কাজী নজরুল ইসলাম

দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি ব’লে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে!
চোখ ফেটে এল জল,
এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,
বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!
কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্‌?
রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে,
রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে,
বল ত এসব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা
কার খুনে রাঙা?-ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি হঁটে আছে লিখা।
তুমি জান না ক’, কিন- পথের প্রতি ধূলিকণা জানে,
ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে!
আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
তুমি শুয়ে র’বে তেতালার পরে আমরা রহিব নীচে,
অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে ভরসা আজ মিছে!
সিক্ত যাদের সারা দেহ-মন মাটির মমতা-রসে
এই ধরণীর তরণীর হাল রবে তাহাদেরি বশে!
তারি পদরজ অঞ্জলি করি’ মাথায় লইব তুলি’,
সকলের সাথে পথে চলি’ যার পায়ে লাগিয়াছে ধূলি!
আজ নিখিলের বেদনা -আর্ত পীড়িতের মাখি’ খুন,
লালে লাল হ’য়ে উদিছে নবীন প্রভাতের নবারুণ!
আজ হৃদয়ের জমা-ধরা যত কবাট ভাঙিয়া দাও,
রং-করা ঐ চামড়ার যত আবরণ খুলে নাও!
আকাশের আজ যত বায়ু আছে হইয়া জমাট নীল,
মাতামাতি ক’রে ঢুকুক্‌ এ বুকে, খুলে দাও যত খিল!
সকল আকাশ ভাঙিয়া পড়-ক আমাদের এই ঘরে,
মোদের মাথায় চন্দ্র সূর্য তারারা পড়-ক ঝ’রে।
সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি’
এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো এক মিলনের বাঁশী।
একজনে দিলে ব্যথা-
সমান হইয়া বাজে সে বেদনা সকলের বুকে হেথা।
একের অসম্মান
নিখিল মানব-জাতির লজ্জা-সকলের অপমান!
মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান,
উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান

Sunday, September 11, 2016

বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি,
              সে কি সহজ গান।
       সেই সুরেতে জাগব আমি
              দাও মোরে সেই কান।
                                  ভুলব না আর সহজেতে,
                                  সেই প্রাণে মন উঠবে মেতে
                                  মৃত্যুমাঝে ঢাকা আছে
                                         যে অন্তহীন প্রাণ।

       সে ঝড় যেন সই আনন্দে
              চিত্তবীণার তারে
       সপ্ত সিন্ধু দশ দিগন্ত
              নাচাও যে ঝংকারে।
                                  আরাম হতে ছিন্ন ক'রে
                                  সেই গভীরে লও গো মোরে
                                  অশান্তির অন্তরে যেথায়
                                         শান্তি সুমহান।