Saturday, December 31, 2016

দ্বিজ চণ্ডীদাস- সই কেমনে ধরিব হিয়া ।

সই কেমনে ধরিব হিয়া ।
আমার বঁধুয়া, আন বাড়ি যায়,
আমার আঙিনা দিয়া ।।
সে বঁধু কালিয়া, না চায় ফিরিয়া,
এমতি করিল কে ।
আমার অন্তর, যেমন করিছে,
তেমতি হউক সে।।
যাহার লাগিয়া, সব তেয়াগিনু,
লোকে অপযশ কয়।
সেই গুণ নিধি, ছাড়িয়া পিরীতি,
আর জানি কার হয় ।
আপনা আপনি, মন বুঝাইতে,
পরতীত নাহি হয়।
পরের পরাণ, হরণ করিলে,
কাহার পরাণে সয় ।।
যুবতী হইয়া, শ্যাম ভাঙাইয়া,
এমতি করিল কে ।
আমার পরাণ, যে মতি করিছে,
সে মতি হউক সে ।।
কহে চণ্ডীদাস, করহ বিশ্বাস,
যে শুনি উত্তম মুখে।
কেবা কোথা ভাল, আছয়ে সুন্দরী,
দিয়া পর মনে দুখে।।

Friday, December 30, 2016

কেন বা কানুর সনে পিরীতি করিনু ।

কেন বা কানুর সনে পিরীতি  করিনু ।
না ঘুচে দারুন নেহা ঝুরিয়া মরিনু ।।
আর জ্বালা সইতে নারি কত উঠে তাপ ।
বচন নিঃসৃত নহে বুকে খেলে সাপ ।।
জন্ম হইতে কুল গেল ধর্ম গেল দূরে ।
নিশি দিশি প্রাণ মোর কানু গুন ঝুরে ।।
নিষেধিলে  নাহি মানে ধরম বিচার ।
বুঝিনু পীরিতের হয় স্বতন্ত্র আচার ।।
করমের দোষ এ জনমে কিবা করে ।
কহে বড়ু চণ্ডীদাস  বাশুলীর বরে ।।

এক কাল হইল মোর নয়লি যৌবন ।

এক কাল হইল মোর নয়লি যৌবন ।
আর কাল হইল মোরে বাস বৃন্দাবন ।।
আর কাল হইল মোর কদম্বের তল ।
আর কাল হইল মোর যমুনার জল ।।
আর কাল হইল মোর রতন ভূষণ ।
আর কাল হইল মোর গিরিগোবর্ধন ।।
এত কাল সবে আমি বঞ্চি  একাকিনী ।
এমন জনেক নাই শুনয়ে  কাহিনী ।।
দ্বিজ চণ্ডীদাস   কহে না কহ এমন ।
কর কোন দোষ নাই সব এক জন ।।  

এ দেশে না রব সই দূর দেশে যাবো ।

এ দেশে না রব সই দূর দেশে যাবো ।
এ পাপ পিরীতির কথা শুনিতে না পাব ।।
না দেখিব নয়নে পিরীতি করে যে ।
এমতি বিষম চিতা জ্বালি দিবে সে ।।
পিরীতি আখর তিন না দেখি নয়ানে ।
যে কহে তাহার আর না দেখি বয়ানে ।।
পিরীতি বিষম দায়ে ঠেকিয়াছি আমি ।
চণ্ডীদাস কহে রামি ইহার গুরু তুমি ।।  

এ দেশে বসতি নৈল যাব কোন দেশে ।

এ দেশে বসতি নৈল যাব কোন দেশে ।
যার লাগি প্রাণ কাঁদে তার পাব কিসে ।।
বল না  উপায় সই বল না উপায় ।
জনম অবধি দুখ  রহল হিয়ায় ।।
তিতা কৈল  দেহ মোর ননদী বচনে ।
কত না সহিব জ্বালা এ পাপ প্রানে ।।
বিষ খায়া  দেহ যাবে রব রবে দেশে ।
বাশুলী আদেশে কহে চণ্ডীদাসে ।।

এক জ্বালা গুরুজন আর জ্বালা কানু ।

এক জ্বালা গুরুজন আর জ্বালা কানু ।
জ্বালাতে জ্বলিল দে সারা হইল তনু ।।
কোথায় যাইব সই কি হবে উপায় ।
গরল সমান লাগে বচন হিয়ায় ।।
কাহারে কহিব কেবা যাবে  পরতীত ।
মরণ অধিক হইল কানুর পিরীত ।।
জারিলেক তনু মন কি করে ঔষধে ।
জগত ভরিল কালা কানু পরিবাদে ।।
লোকমাঝে ঠাই নাই অপযশ দেশে ।
বাশুলী  আদেশে কহে দ্বিজ চণ্ডীদাসে ।।

Thursday, December 29, 2016

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুনে মন ভোর ।

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুনে মন ভোর ।
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর ।।
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে ।
পরান পিরীতি লাগি থির নাহি বান্দে ।।
সই কি আর বলিব ।
যে পণ কর‍্যাছি মনে সেই সে করিব ।।
দেখিতে যে সুখ উঠে কি বলিব তা ।
দরশ পরশ লাগি আউলাইছে গা ।।
হাসিতে হসিয়া পড়ে কত মধুধার ।
লহু লহু হাসে বন্ধু পিরীতির সার ।।
গুরু গরবিত মাঝে রহি সখি সঙ্গে ।
পুলকে পূরয়ে তনু শ্যাম পরসঙ্গে ।।
পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার ।
নয়নের ধারা মোর বহে অনিবার ।।
ঘরের যতেক সভে করে কানাকানি ।
জ্ঞান কহে লাজঘরে ভজাইলাম আগুনি ।।

Tuesday, December 27, 2016

সুখ বলে, সারি রে তোর রাঁধার খবর বল

সুখ বলে, সারি রে তোর রাঁধার খবর বল
ছল করে সে কখন আনতে যাবে জল ।
সারি বলে, ওরে সুখ প্রশ্ন বলে তোর
যার লাগি রাই চুরি করে সেই সে বলে চোর ।
জানি ওরে তোর রাঁধা যে দিনকে করে রাত
চোরের উপর গোসা করে মাটিতে খায় ভাত ।
ওরে মাটিতে খায় ভাত
যজ্ঞেশ্বরী হল কুপকাত ।
নিলাজ নিঠুর কৃষ্ণ নাগর চালাক সুচতুর
আমার রাইকে করে কলঙ্কিনী রস সাগরে দেয় ডুব ।
খবরদার শ্যামকে আমার দিসনে রে দোষ খালি
মনে রাখিস এক হাতে বাজে না লো তালি ।
জেনে রাখো কেষ্ট যে তোর ভিমরুলেরই হুল
রাই কমলের মধু খেয়ে ভাঙল রাইয়ের কুল ।
এ কথাতো সবাই জানে হয়লো মধু ফুলে কেন
কেন হয়লো মধু ফুলে ?
ও রাই ঘোমটা দিয়ে নাচবে খ্যামটা
আবার জাঁতও যাবে ছুঁলে ।
সবাই জানে কেমন রে তোর শ্যামের ভালোবাসা
পিরীতি নয় পদ্মপাতা ও যে ব্যাঙের বাসা ।
বর্ষাকালে ব্যাঙ ডাকিলেই রাঁধার পোয়া বারো
চলতি পথে নূপুর খানি যায়না  কানে
কারো
সারি বলে প্রেমের কথা তুলিস রে তুই যদি
মনে রাখিস পুরুষেরই প্রেম যে মজা নদী ।
সুখ বলে মজা নদীর ঐ তো মজা হায়
ঝাপ দিয়ে যে তোর রাধিকার জীবন বেঁচে যায় ।

Sunday, December 25, 2016

''স্মৃতিতে তুমি''

...............
ফেসবুকে ঢুকতেই বার্তা এলো-
''ফটিক ফটিক দয়াকলা
ফটিক নাচে বেহান বেলা
ওলো ফটিক ভাই
তোর কপালে বিয়া নাই ''
আপনি কি ছোটবেলার মতো এখনো ছাড়াটা বলেন ?
কেন বলুন তো ? আপনি কে ?
হায়রে রাজীব ঢালী ! তুমি আমারে চিন না !
Really , I do not know you . Who are you ?
সেই চৈত্র মাসের কলাই খেতের কথা ভুলে গিয়েছেন !
আমার কিছুই মনে নেই । কে বলছেন ? সত্যি করে বলুন তো ।
এরপর আমি প্রায় ৪০টা ম্যাসেজ দিলাম কোন উত্তর নেই কিন্তু সিন হচ্ছে !
ফোনটা বেজে উঠলো । একটা বিদেশী নাম্বার । ধরলাম । ওপাশ থেকে ভেসে আসছে তার কান্না !
গলাটা আমারও ভিজে আসছে; কিছুই বোলতে পারলাম না !
ফোনটা কেটে গেল !
মনে পড়লো সেই ছয় সাত বয়সের বালিকাকে ! সেই কলাইয়ের খেতের মধ্যে , উঠানের দৌড়া দৌড়ী !
সত্যি আজ তোমাকে খুব মনে পাড়ছে ! I really miss you . জীবনে যেন আমাদের একবার দেখা হয় !

সে আমাকে খুঁজেছে কিন্তু আমি তাকে খুজিনি ! কত স্বার্থপর আমি !

Saturday, December 24, 2016

প্রাচ্য-পৌরাণিক নারী তারা


তারা হলেন নক্ষত্ররাজ্যের দেবী। তারা বৃহস্পতির স্ত্রী। বৃহস্পতি দেবতাদের পুরোহিত। তারা অতি সুন্দরী যুবতী। একদিন সোম বা চন্দ্র তারাকে দেখে তাঁর রূপে এত অধীর ও মুগ্ধ হয়ে গেলেন যে, তারাকে বৃহস্পতির কাছ থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে নিজের প্রাসাদে আটকে রাখেন। বৃহস্পতি বা ব্রহ্মার শত অনুরোধেও সোম তারাকে ফিরিয়ে দেন না। সমস্ত দেবকুল তখন সোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সোমের হয়ে লড়াই করে অসুরগণ, যার অধিপতি শুত্রু। বিশাল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। মারামারি, কাটাকাটি করে সর্বাংশে ধ্বংস হয়ে যাবার ভয়ে ব্রহ্মা আবার ফিরে আসেন সোমের কাছে; সোমকে তিনি বোঝান। সোম এবার রাজি হন এবং তারাকে মুক্ত করে দেন। তারা ফিরে আসেন বৃহস্পতির কাছে। কিন্তু অচিরেই টের পাওয়া যায়, তারা অন্তঃসত্ত্বা। বৃহস্পতি জানতে চান, এই সন্তানের পিতা কে - তিনি না সোম? কিন্তু তারা কিছুতেই তার জবাব দেন না। বৃহস্পতি তখন সন্তান জন্মের আগে তারাকে গ্রহণ করতে অসম্মতি জানান। বলেন, যতক্ষণ পুত্র জন্মলাভ না করছে তারাকে তিনি গ্রহণ করবেন না। এ-কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে তারার গর্ভের পুত্র জন্মগ্রহণ করে ফেলে। উজ্জ্বল সুন্দর দিব্যকান্তির পুত্রকে দেখে সোম ও বৃহস্পতি উভয়েই তাকে নিজের সন্তান বলে দাবি করেন। তাদের মধ্যে এত রেষারেষি, কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব দেখে শিশুটি রেগে গিয়ে উভয়েকেই অভিশাপ দিতে উদ্যত হলে ব্রহ্মা আবার আসেন তাদের উদ্ধারে। তিনি তারাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বিশেষভাবে জানতে চান আসলেই এই শিশুর পিতা কে - বৃহস্পতি না সোম। তখন তারা স্পষ্ট জানান, সোম। সোম সানন্দে পুত্রকে গ্রহণ করেন এবং তার নাম রাখেন বুধ।

পুরাণে তারার কাহিনি এভাবে বর্ণিত হলেও বীরাঙ্গনা কাব্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের চোখে সোম-তারার সম্পর্ক ভিন্নভাবে, নবরূপে ধরা দিয়েছে। মধুসূদন তাদের সম্পর্ককে অনেকটা কচ-দেবযানীর সম্পর্কের মতো করে এঁকেছেন। এখানে তারাকে তিনি দেবযানীর মতো গুরু-কন্যা না করে কল্পনা করেছেন গুরুপত্নী হিসেবে। গুরুপত্নী প্রায় মায়ের স্থলাভিষিক্ত। ফলে এই প্রেম বৈধ নয়। মধুসূদনের বীরাঙ্গনা কাব্যে দেবতাদের পুরোহিত বৃহস্পতি সোমের গুরু। শিক্ষাশেষে সোম যখন গুরুগৃহ ত্যাগ করতে উদ্যত, তখন তাঁর সান্নিধ্যের জন্যে উদ্গ্রীব, তাঁর প্রেমে অধীর গুরুপত্নী তারা সোমকে তাঁর গভীর প্রণয়ের কথা প্রকাশ করে একখানা পত্র লেখেন। সোমের আসন্ন বিরহে অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়েন তারা, যদিও তিনি সম্পূর্ণ অবগত যে, বৃহস্পতি সোমের গুরু। সেই হিসেবে গুরুপত্নীর সঙ্গে রোমান্টিক প্রেমের সম্পর্ক সম্পূর্ণ অনৈতিক। এর জন্যে তারার মনেও বহু দ্বিধা, সংকোচ ও অপরাধবোধ। কিন্তু সোমের প্রতি তাঁর বাঁধভাঙা ভালোবাসার কাছে ভেসে যায় সেই শাস্ত্রীয় নিয়মকানুন, সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সতীত্বরক্ষার অলিখিত নির্দেশ। আসন্ন বিদায়ী সোমকে লেখা তারার সেই চিঠিতে অনেক উদ্ধৃতি, অনেক অতীত দৃশ্যের অবতারণা, অনেক যৌথ অভিজ্ঞতার উল্লেখ রয়েছে। এসব থেকে পাঠককুল নিশ্চিন্ত হবেন যে, তারা এবং সোম দুজনেই দুজনকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন - অনেক দিন থেকেই। ফলে বীরাঙ্গনা কাব্যের ‘সোমের প্রতি তারা’ পত্র পাঠ করলে মনে হবে সোমের এই তারা-অপহরণ প্রকৃতপক্ষে কোনো অপহরণ ছিল না। অথবা এই সাজানো অপহরণ তারার সহযোগিতা বা ইন্ধনেই ঘটেছিল। কিন্তু পুরাণে তাদের অপহরণপূর্ব কোনো সম্পর্ক বা সোমের অন্তঃপুরে স্বেচ্ছায় তারার গমনের কোনো উল্লেখ নেই। এমনকি সোম যে বৃহস্পতির শিষ্য, সে-কথাও কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।
(http://archive.sahos24.com/2014/08/16/12105/print )

Friday, December 23, 2016

চণ্ডীদাস - দেখিলে কলঙ্কীর মুখ কলঙ্ক হইবে ।


দেখিলে কলঙ্কীর মুখ কলঙ্ক হইবে ।
এ জনার মুখ আর দেখিতে না হবে ।।
ফিরি ঘরে যাও নিজ ধর্ম লইয়া ।
দেশে দেশে ভ্রমিব যোগিনী হইয়া ।।
কাল মানিকের মালা গাঁথি নিব গলে ।
কানু গুন যশ কানে পরিব কুণ্ডলে ।।
কানু অনুরাগ রাঙ্গা বসন পরিব ।
কানুর কলঙ্ক ছাই অঙ্গেতে লেপিব ।।
চণ্ডীদাস কহে কেন হইলা উদাস ।
মরণের সাথী যেই সে কি ছাড়ে পাশ ।।

Thursday, December 22, 2016

বড়ু চণ্ডীদাসঃ এই ভয় উঠে মনে এই ভয় উঠে ।

এই ভয় উঠে মনে এই ভয় উঠে ।
না জানি কানুর প্রেম তিলে জানি ছুটে ।।
গড়ন ভাঙ্গিতে সই আছে কত খল ।
ভাঙ্গিয়া গড়িতে পারে সে বড় বিরল ।।
যথা তথা যাই আমি যত দুঃখ পাই ।
চাঁদমুখে হাসি হেরি তিলেক জুড়াই ।।
সে হেন বধূরে মোর যে জন ভাঙ্গায় ।
হাম নারী অবলায় বধ লাগে তায় ।।
চণ্ডীদাস কহে রাই ভাবিছ অনেক ।
তোমার পিরীতি বিনে সে জিয়ে তিলেক ।।

Monday, December 5, 2016

''বদনা বিষয়ক ভাবনা ''

.......................................
( ১ম পর্ব )
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠিয়া তাহার গলা না ধরিলে কেমন করিয়া চলে ! সেই মুহূর্তে তাহাকেই একমাত্র আপন বলিয়া মনে হয় । সে যে কি যাদু জানে, সেই জানে ! আজ সকালবেলা বৈকুণ্ঠে গিয়ে তাহার শ্রীরূপ প্রত্যক্ষ করিয়া নয়ন ভরিয়া গেল । আহা ! সামাদ স্যার ঠিকই বলিয়াছিলেন ,’’ মানব সভ্যতার সেরা আবিষ্কার বদনার নাল! ‘’ আহা ! বদনা , তার এবার নাল !’’
আমি বসিয়া বসিয়া সেই নাল আবিষ্কার করার শুভক্ষণের কথা কল্পনা করিতে লাগিলাম ।
মনে পড়িল সেই মনিষীর কথা । যিনি বলিয়া ছিলেন ,’’ কোন জাতিকে অপমান করিতে চাও , তাহলে তাহার বদনাগুল ধ্বংস করিয়া ফেল ।‘’
বদনার মাহাত্ম্য বলিয়া শেষ করা যাইবে না , তাই হয়তো বদনা লইয়া কবিরা মহাকাব্য লিখিবার সাহস দেখান নাই । তবে কেউ কেউ সেই দুঃসাহস দেখাইয়া রচনা করিয়াছেন চিরস্মরণীয় সেই কবিতা ,
‘’ শোন , মা জরিনা , বদনাটা কই ?
ত্বারা করে মোরে বল ।
প্রকৃতির ডাক আসিয়াছে মোর
এখনি লাগিবে জল । ‘’


শোনা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার বনে গিয়ে বদনার সঙ্কটে পড়িয়াছিলেন । তখন তিনি রচনা করিয়াছিলেন সেই আমর কবিতাঃ
‘’ সে দিন দুজনে হেগে ছিনু বনে ,
বদনা ছিল না সাথে ,
তাল পাতা দিয়ে পাছা মুছে তাই
চলে আসিছিনু ঘরে ।‘’
এ প্রসঙ্গে এক লৌকিক কবিকে বাথরুমে গাহিয়া উঠিতে শুনিয়াছিলামঃ
‘’বদনা আমার ছ্যাদা হইয়া গেছে
পানি থাকে না । ‘’
এই পানি না থাকার অভিজ্ঞতা যাহার হইয়াছে , সে ইহকালে নরক ভোগ করিয়াছে , সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই বলিয়া মনে হইতেছে । একবার এক মহৎ ব্যাক্তি বাথরুমে যাইবেন বলিয়া স্থির করিয়াছেন কিন্তু তাহার বন্ধু মদন তাহাকে জব্দ করিবার জন্য বদনাখানা লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন তখন তিনি গাহিয়ছিলেন, সেই আধ্যাত্মিক গান,
‘’ চাহি বদনা , বদনা দেয় না , মদনে
আমি বাথরুমে যাবো কেমনে ?
আমি বাথরুমে যাবো কেমনে ?’’
আমার দাদু তাহার এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিলেন । তাহারা যাইয়া দেখেন পাত্রী পক্ষ বিয়ের পাত্রী উলটাইয়া দিয়াছে । ছোট বোনকে দেখাইয়া , এখন বড় বোনকে বিয়ের পিড়িতে বসাইয়া দিয়াছে । পাত্র তাহা বুঝিতে পারিয়া , বিয়ের পিড়িতে বসিয়াই বলিল আমার বাথরুমে যাওয়া দরকার । তখন পাত্রী পক্ষ তাহাকে বাথরুমে লইয়া গেলে , তিনি বদনা লইয়াই দৌড়ে পালিয়েছিলেন ।
আমি ভাই , গ্রামের মানুষ , মাঝে মাঝে কোন শহুরে বাড়িতে কিংবা হোটেলে গেলে বাথরুমে দেখি বদনা নাই ! তখন যে আমার অবস্থা কি হয় , তাহা আমি জানি আর উপরওয়ালা জানেন ! ( আর তখন ব্যাকগ্রাউন্দে মিউজিক বাজেঃ
‘’এতো কষ্ট মেনে নেওয়া যায় না !
নিষ্ঠুর হোটেল ওয়ালা / বাড়ি ওয়ালা ।‘’ )
( চলবে ............)

Friday, December 2, 2016

বাঁশ

রাজীব ঢালী
-----
বাঁশ
ইহা আমার খুবই প্রিয় খাদ্য । বাঁশ ছাড়া আমার চলেই না । বাঁশের সুপ , বাঁশ ভাজি , বাঁশের তরকারি , বাঁশের পরটা , বাঁশের মামলেট , বাঁশের ভর্তা , বাঁশের খুচুরি কত খাইয়াছি , ভবিষ্যতে আরও খাইব । মাঝে মাঝে এমন ও বাঁশ খাইয়াছি, যাহা নিচের দিকের কোন এক দরজা দিয়া ঢুকিয়া উপরের দরজা দিয়া বাহির হইয়া গিয়াছে । তবুও তাহা হজম করিয়াছি । বাঁশ হজমে বিশেষ ক্ষমতা আমার আছে । না হইলে এতো বাঁশ হজম করি কি করিয়া ! বাঁশের নাম শুনিলেই এখন জিভে জল আসিয়া পড়ে , খাইতে ইচ্ছা করে । আমার হাতে ক্ষমতা থাকিলে বাঁশকে জাতীয় খাদ্য ও বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করিয়া তবেই ক্ষান্ত হইতাম ।
আশা করিতেছি এই নির্বাচনে জিতিয়া , দেশের প্রধান হইব এবং জাতীয় বাঁশ নীতি , জাতীয় বাঁশ গবেষণা Institute , জাতীয় বাঁশ রক্ষা কমিটি , সংসদীয় বাঁশ কমিটি গঠন করিব ।
ঘরের আঙ্গিনায় বাঁশ রোপণ বাধ্যতামূলক করিব এবং খাবার সময় বাঁশের একটা আইটেম বাধ্যতামূলক করিব । বাঁশই আমাদের ঐতিয্য । সুতরাং বাঁশ কে রক্ষা করিতে যাহা করা লাগে তাহাই করিব । বাঁশ সম্পর্কিত যত সাহিত্য আছে , তাহাকে জাতীয় সাহিত্য বলিয়া ঘোষণা করিব । এবং বাঁশ দ্বারা পিটানো ও অন্যান্য বাঁশ দ্বারা পরিচালিত খেলাকে জাতীয় খেলা বলিয়া ঘোষণা করিব । বাঁশ দ্বারা পিটানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করিব এবং ‘’বিশ্ব বাঁশ কাপ’’ আয়োজন করিব । যাহাতে বাঁশের মহিমা ও গৌরব সম্পর্কে বিশ্ববাসী জানিতে পারে ।
পাঠ্যপুস্তকে বাঁশ সম্পর্কে জ্ঞানীগুণীরা এখনো কিছু অন্তর্ভুক্ত করেন নাই । কিন্তু আমি করিব । পাঠ্যপুস্তক হইবে বাঁশময় । বাঁশের গুণগান থাকিবে সর্বত্র ।গ্রামে গ্রামে বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বাহিয়া ওঠা প্রতিযোগিতার আয়োজন হইবে !ভাবিতেই আমার ভালো লাগিছে ।
বাঁশ কাটিয়া যে খাতা তৈরি করা হয় । তাহা নিষিদ্ধ করিব । সুতরাং পরীক্ষা দেওয়ার ঝামেলা হইতে ছাত্ররা মুক্ত হইবে । আর হ্যাঁ , দেশে যৌতুক নিষিদ্ধ করিয়া , বাঁশ দেওয়া চালু করিয়া দিব ।
থাক হইয়াছে আজ আর আপনাদের বাঁশ দিবো না । সামনের ভাষণে দিবো । সাথে করিয়া সরিষার তৈল ফ্রি দিব , যাতে বাঁশ খাইতে যেন বেশি কষ্ট না হয় ।